Skip to content
The Gospel

কর্মযুক্ত বিশ্বাসে পাপের পরিত্রাণ নাকি শুধু বিশ্বাসে পরিত্রাণ?

July 26, 2024

বাইবেল স্টাডি

খ্রিষ্টে বিশ্বাসীদের ফোকাস করে এই আর্টিকেলটি লিখিত হয়েছে, তাই আপনি যদি খ্রিষ্টে বিশ্বাসী না হন অথবা নতুন বিশ্বাসী হন, আপনার জন্য এই লেখা বুঝা বেশ কঠিন হতে পারে।

শুধু বিশ্বাসে পরিত্রাণ নাকি কর্মযুক্ত বিশ্বাসে পরিত্রাণ। বিষয়টি নিয়ে যুগ যুগ ধরে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে এবং এখনও চলছে। এটি নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মত পোষণ করেন যার প্রতিক্রিয়ায় দলাদলিও সৃষ্টি হয়েছে। বাইবেলে বেশ কিছু পদ আছে যেগুলো পড়ে মনে হয় স্বর্গে যাওয়ার জন্য শুধু বিশ্বাস থাকলেই হবে, এই বাইবেলেই আবার কিছু পদ আছে যা পড়লে মনে হয় শুধু বিশ্বাস যথেষ্ট নয় কিন্তু পরিত্রাণের জন্য কাজেরও প্রয়োজন আছে। এই বিতর্কিত বিষয় নিয়েই আমি ব্যাক্তিগতভাবে স্টাডি করেছি। অন্যান্য থিওলজিয়ান বা আদিপিতারা কি বলেছেন সেইসমস্ত বিষয় আমি এই স্টাডিতে নিয়ে আসবনা বরং বাইবেল কি দেখায় এবং ধ্যানে আমি কি পেয়েছি সেই বিষয়গুলো নিয়ে আসব। এই আর্টিকেলে আমি যাকোব ২ অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করেছি। কর্ম নিয়ে বাইবেলে আরও অন্যান্য অংশ আছে যা আমি এখানে নিয়ে আসিনি, ভবিষ্যতে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

আপনি যখন এই স্টাডি পড়বেন, তখন বেশ কিছু স্থানে মনে হতে পারে যে আমি বাইবেলের বিপরীতে কথা বলছি। আমার বিশ্বাস, আপনি যদি নিরপেক্ষভাবে পড়তে থাকেন তাহলে অনেক বিষয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ধন্যবাদ।

যাকোব ২ অধ্যায়ে বেশ কয়েকটি পদ আছে যা দেখিয়ে অনেকে ব্যাখ্যা দেন যে শুধু বিশ্বাস করলে হয়না কিন্তু পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য ভাল কাজেরও প্রয়োজন হয়। এটা বুঝানোর জন্য বিশেষ করে যে পদ ব্যাবহার করা হয় তা হল-

এটি পড়ে মনে হয় যে শুধু বিশ্বাস থাকলে হবে না, বিশ্বাসের সাথে কাজেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু এটাই যদি সত্য হয় তাহলে বাইবেলের যে পদগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে যে পাপ থেকে উদ্ধার আমাদের কর্মের ফল নয়, নিজের কাজ দ্বারা আমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারি না, সেই পরিষ্কার পদগুলোর সাথে দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ তৈরি হয়। এই দ্বন্দ্ব আমরা মেটাব কিভাবে? শুধু বিশ্বাসে পরিত্রাণ পাই এবং পাপ থেকে উদ্ধার আমাদের কর্মের ফল নয়, এমন পরিষ্কার পদের কয়েকটি উদাহরণঃ

তাহলে কিভাবে সিদ্ধান্ত নেব যে কোনটা সঠিক? আসুন বাইবেল স্টাডিতে যাই, তাহলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হতে পারে-

বাইবেল স্টাডি

১ম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ সাধারণ অনুবাদে যাকোব ২ঃ২৪ পদে “ঈশ্বর” শব্দটি উল্লিখিত আছে। গ্রীক বাইবেলে এই ঈশ্বর শব্দটা নেই(আমি নিজে দেখেছি), Theos, Pneuma, christos নামক শব্দ এই পদে যেহেতু নেই তাই এটা ব্যাখ্যার সময় ঈশ্বর শব্দটা আমি সম্পূর্ণ বাদ দেব। কেরী অনুবাদ এবং বিভিন্ন ইংরেজি ভার্সনে এর সঠিক অনুবাদ পাওয়া যায়। নিচে আমি কেরী এবং কিং জেমস ভার্সনের অনুবাদ তুলে দিচ্ছি।

ঈশ্বর শব্দটি না থাকলেও প্রথম দর্শনে এই পদ পড়ে মনে হচ্ছে যে পরিত্রাণের জন্য বিশ্বাস ও কাজ উভয়ই প্রয়োজন। তবে এর ঠিক আগের পদ অর্থাৎ যাকোব ২ঃ২৩ পদে লেখক নিশ্চিত করছেন যে অব্রাহাম বিশ্বাস করলেন, আর তাই ঈশ্বর তাহাঁকে ধার্মিক বলে গণিত করলেন। এই অংশটি তিনি আদিপুস্তক ১৫ অধ্যায় থেকে নিয়ে এসেছেন।

২য় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ আদি ১৫ঃ১-৬ পদ। সদাপ্রভু অব্রাহামকে বলেছিলেন যে তাঁর বংশ আকাশের তারার অসংখ্য হবে। আদি ১৫ঃ৬ পদে আছে- “তখন তিনি সদাপ্রভুকে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্মিকতা বলিয়ে গণনা করিলেন।” তখনও অব্রাহামের সন্তান হয়নি। ইসহাককে উৎসর্গ করার জন্য আরও অনেক পরে নেয়া হয়, আদিপুস্তক ২২ অধ্যায়ে। এই উৎসর্গের অনেক বছর আগেই অব্রাহামকে বিশ্বাসে ধার্মিক গণনা করা হয়ে গেছে। যাকোব আগে থেকেই জানতেন যে কর্ম করার আগেই ঈশ্বর অব্রাহামকে ধার্মিক বলে গণ্য করলেন। উৎসর্গ করার অনেক বছর আগেই বিশ্বাসে তিনি ঈশ্বরের চোখে ধার্মিক। এই বিষয়টা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ হবে।

প্রথমে যাকোব ২ঃ১-১৩– পদ পর্যন্ত সারাংশ ব্যাখ্যা করব। পরে ১৪-২৬ পদ পর্যন্ত প্রতিটা পদ ধাপে ধাপে স্টাডি করব। (কেরী থেকে)

যাকোব পুস্তকের হালকা প্রেক্ষাপটঃ

যাকোব ১ অধ্যায়ে উল্লেখ করা আছে, লোকেরা যেন শুধু শ্রোতা না হয়ে বাক্যের কার্যকরি মানুষ হয়। এখানে অনাথ ও বিধবাদের সংগে দাঁড়ানোকে ঈশ্বরের চোখে শুচি ও বিমল ধর্ম বলে অভিহিত করা হয়েছে (যাকোব ১ঃ২২-২৭ পদ)। এই পুস্তক লেখা হয়েছে ছড়িয়ে পড়া ১২ বংশের যিহূদী খ্রিষ্টানদের কাছে (যাকোব ১:১)। যেহেতু যিহূদী খ্রিষ্টানদের কাছে লেখা তাই তারা অব্রাহামের কাহিনী ভাল করেই জানত যা যাকোব ২ অধ্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

যাকোব ২ঃ১৮ পদটি যদি গভীরভাবে ব্যাখ্যা করি তাহলে এটা আরও স্পষ্ট হয়।

এখানে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে ওরা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের বিশ্বাসকে প্রমাণ করছে না কিন্তু মানুষের কাছে প্রমাণ করছে। তাই কাজ দ্বারা আমরা ঈশ্বরের কাছে গৃহীত হই না কিন্তু মানুষের কাছে প্রমাণ করি এবং সত্য বিশ্বাসী বলে গৃহীত হই। সত্য বিশ্বাস থাকলে একসময় কর্ম আসার কথা কিন্তু এই কর্ম কখনও পাপের পরিত্রাণ দেয় না। কারণ কাজ করার আগেই ঈশ্বর অন্তর জানেন যে কে বিশ্বাস করে আর কে করে না।

মানুষের কাছে বিশ্বাসে গৃহীত হওয়ার উদাহরণঃ

(পুরোপুরি উপযুক্ত উদাহরণ নয়, তবে কিছুটা সাহায্য হবে আশা করি।)

একজন মানুষ বিশ্বাস করে এবং মুখেও বলে যে ধূমপান খারাপ, অথচ সে নিজে ধূমপান করে। অন্যান্য মানুষ কিভাবে বুঝবে সে নিজের কথা বিশ্বাস করে? যদি সে নিজে ধূমপান বন্ধ করে। এক্ষেত্রে নিজে ধূমপান বন্ধ করলে ধূমপানের বিরুদ্ধে তার শিক্ষা গ্রহণযোগ্য হবে এবং এইভাবে সে অন্য নেশাগ্রস্থদের উদ্ধারেও সাহায্য করতে পারবে।

একটি বিশ্বাস যদি নিজের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে না আসে তাহলে বাইরে প্রমাণ হয় যে সে নিজে যা বলে তা নিজেই বিশ্বাস করে না। একজন মানুষ মুখে বলে যে সে যীশুর সুসমাচারে বিশ্বাস করে, কিন্তু সে যদি যীশুর মত হওয়ার জন্য কোন পদক্ষেপ না নেয়, যদি নিশ্চয়তার সাথে অন্যদের পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য যীশুর বিষয় প্রচার করতে উৎসাহী না হয়, তাহলে লোকদের কাছে প্রমাণ হয় যে সে হয়তো আসলে বিশ্বাস করে না। তার বিশ্বাস মৃত বলেই সে অবিশ্বাসীদের কাছে প্রচার করে না, এবং এই কারণে এরকম বিশ্বাসী অন্যদের উদ্ধারের পথে কোন সাহায্য করতে পারছে না। এদের বিশ্বাস লোকদের কাছে মৃত। নিজেরা হয়তো পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছে কিন্তু অন্যদের কাছে তার বিশ্বাস মৃত। অর্থাৎ সারাংশ হল যাকোব ২ অধ্যায় কখনোই প্রকাশ করে না পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য কাজের প্রয়োজন। এটা প্রকাশ করে অন্যদের উদ্ধারের জন্য বিশ্বাস ও কাজের প্রয়োজন। বিশ্বাস ও কাজ অন্যদের সামনে আমাদের বিশ্বাসকে সিদ্ধ বা পূর্ণতা দান করে।

যাকোব ২ অধ্যায় শেষ হল- এখন একটু ভিন্ন বিষয়।

অনেকের মুখে শুনেছি, পাপ থেকে পরিত্রাণ নাকি হারিয়ে যেতে পারে। একবার পরিত্রাণ পেলেও তা ঈশ্বর আবার তুলে নিতে পারেন। আসলেই কি তাই? তাহলে আমাদের নিশ্চয়তা কোথায়? পবিত্র আত্মার সীল কি তাহলে কাজ করে না? ঈশ্বর কি তাহলে নিজের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন?

পুরাতন নিয়মে আপনি দেখতে পাবেন, ঈশ্বরের শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞাগুলো মানুষ হারাতে পারে, যেমন ইস্রায়েল জাতি প্রতিজ্ঞাত দেশ হারিয়েছিল কারণ দেশ দেয়ার প্রতিজ্ঞা ছিল শর্তবিহীন, কিন্তু দেশে টিকে থাকতে পারবে কিনা সেই বিষয়টা ছিল শর্তযুক্ত। শর্তবিহীন প্রতিজ্ঞা ঈশ্বর কখনও তুলে নেন না। কিন্তু শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞা মানুষ হারাতে পারে। যীশুর মধ্য দিয়ে পাপ থেকে উদ্ধার একটি শর্তবিহীন প্রতিজ্ঞা, এর জন্যই তিনি পবিত্র আত্মার সীল দিয়েছেন যে সীল কখনও উঠবে না।

আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে আমরা ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার অধিকার বা পাপ থেকে পরিত্রাণ হারাতে পারি। কোন পদ দেখে আপনার মনে হয় যে আমরা পরিত্রাণ হারাতে পারি সেটা দয়া করে আমাকে একটু জানান। আমি উপরের মত স্টাডি করে আমার উত্তর দেব। অনেক সময় আমরা আত্মিক পরিত্রাণ ও জাগতিক পরিত্রাণের পদ এক করে ফেলি এবং বলি যে পাপের পরিত্রাণ হারানো যায়। অনেক সময় ঈশ্বরের শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞা ও নিঃশর্ত প্রতিজ্ঞা এক করে ফেলি এবং বলি পরিত্রাণ হারানো যায়। অনেক সময় ঐতিহাসিক ঘটনার পরিত্রাণ এবং পাপের পরিত্রাণ এক করে ফেলি এবং বলি যে পরিত্রাণ হারানো যায়। অনুগ্রহ করে আপনি নিজের প্রশ্ন এবং বাইবেল থেকে পদ পাঠান, সময় পেলে আমি সেই পদ নিয়ে স্টাডি করব।

পরিত্রাণের জন্য কর্ম লাগে, এই ধরণের ব্যাখ্যার সময় আমাদের সাধারণ ভুলগুলো হল-

১) সন্তান হওয়া এবং শিষ্য হওয়ার মধ্যে পার্থক্য না বুঝা। যীশুর মধ্য দিয়ে আমরা সন্তান হওয়ার অধিকার পাই যা ঈশ্বর কখনও তুলে নেন না। সন্তান হওয়ার জন্য আমাদের কোন যোগ্যতা এবং কর্ম লাগে না। শিষ্য হওয়ার জন্য যোগ্যতা ও কর্ম লাগে, শিষ্য হওয়ার জন্য ক্রুশ বহন করা দরকার। শিষ্যত্ব আমরা হারাতে পারি কিন্তু সন্তানের অধিকার হারাই না। এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য না করে যখন ব্যাখ্যা করা হয় তখন মানুষ বলে যে পাপ থেকে উদ্ধারের জন্য কর্ম লাগে। যীশুকে গ্রহণ করে সবাই ঈশ্বরের সন্তান হতে পারে, কিন্তু কর্ম না করে বা নিজের ক্রুশ বহন না করে কেউ যীশুর যোগ্য শিষ্য হতে পারে না। বাইবেলে শিষ্য এবং সন্তানের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য বিদ্যমান। স্বর্গে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের সন্তান হওয়া আবশ্যক, শিষ্য হওয়া নয়। যীশুর কথানুসারে তাঁকে গ্রহণ করে আমরা ঈশ্বরের সন্তান হই, আর তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর শিষ্য হই। যীশুর শিষ্য না হয়ে ঈশ্বরের অপরিপক্ক সন্তান হয়ে থাকলে আমি নিজেই পৃথিবীতে অভিশাপ টেনে নিয়ে আসব যা ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়।

২) জাগতিক পরিত্রাণের পদকেও পাপ থেকে পরিত্রাণের পদ মনে করা এবং সেইভাবে ব্যাখ্যা করা।

৩) ঈশ্বরের শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞা এবং শর্তহীন প্রতিজ্ঞার মধ্যে পার্থক্য না বুঝা, পরে শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞার মধ্যে পাপ থেকে উদ্ধারের বিষয়কে ঢুকিয়ে দেওয়া।

৪) আমার আগের ভুল চিন্তাকে ঠিক প্রমাণিত করার জন্য নিজের ভুলকে স্বীকার না করা। অহংকারে নিজের ভুল ধরে রাখা।

৫) আগে যা শিক্ষা পেয়েছি তা যে ভুল হতে পারে সেটা কল্পনাও না করা।

৬) বাইবেলে অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে বলা পদ এবং বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে বলা পদ মিশিয়ে একটি মাত্র ব্যাখ্যা তৈরি করা। ইত্যাদি।

অনুগ্রহ করে নিজের চিন্তাকে যাচাই করুন, আমাকেও সংশোধন করুন যেন নিজের ভুল আমি সংশোধন করতে পারি।

ধন্যবাদ।

পূর্ণ সুসমাচারের লিংক- যদি সুসমাচার পড়তে চান- https://gospel.theenglisharticles.com/banglagospel/

আমাদের এই যাত্রায় সাথে দাঁড়াতে চাইলে এবং প্রশ্ন পাঠানোর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন-

simplelearner77@gmail.com

(ব্যস্ততার কারণে যদি উত্তর দিতে দেরী হয় মার্জনা করবেন।)

Contact by Email:

gospel@theenglisharticles.com

This will close in 0 seconds