বাইবেল শিক্ষাঃ
খ্রিস্টান হিসাবে একজন মানুষ অর্থনৈতিকভাবে গরীব হতে পারে, কিন্তু কিপটা হওয়ার কথা নয়। হিসাবী এবং কিপটামি দুইটি ভিন্ন বিষয়। একজন খ্রিস্টান ধনী নাও হতে পারে, কিন্তু লোভী হওয়ার কথা নয়। যীশুতে নতুন জন্মপ্রাপ্ত সব বিশ্বাসী অর্থসম্পদ দিয়ে পূর্ণ থাকবে এমন নয়, কিন্তু কৃতজ্ঞতা এবং দানশীলতা দিয়ে সবারই পূর্ণ থাকার কথা। বাইবেলে একজন দরিদ্র মহিলার কিছুই ছিল না কিন্ত সে ছিল দানশীল। একজনের কত পরিমাণ অর্থ আছে দানশীলতার সাথে সেই পরিমাণের কোন সম্পর্ক নেই বরং একজন কতটা ভালবাসে সেই পরিমাণের সাথে দানশীলতার সম্পর্ক রয়েছে। আপনার যা কিছু আছে তার কতটা দিয়ে আপনি ঈশ্বরকে ভালবাসেন তার সাথে ঈশ্বরীয় দানশীলতার সম্পর্ক রয়েছে।
হিতো ৩ঃ৯- তুমি সদাপ্রভুর সম্মান কর আপনার ধনে, আর তোমার সমস্ত দ্রব্যের অগ্রিমাংসে।
নিজের ধন দিয়ে ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মান করতে হয়।
বর্তমানে অনেক মানুষ মণ্ডলীতে দান করতে চান না, এর অনেক কারণ আছে। উদাহরণ হিসাবে লোকদের কিছু চিন্তা আমি তুলে দিচ্ছি–
১) মণ্ডলীতে দলাদলি। ঈশ্বর একতার কথা বলেন আর মণ্ডলী দলাদলি করে, তাহলে এই মণ্ডলীতে দান দেব কেন?
২) মণ্ডলীতে ইতিবাচক কোন পরিবর্তন দেখছি না, আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই চলছে বরং আরও খারাপ দিকে যাচ্ছে। ঈশ্বরের রাজ্য বৃদ্ধি করার পরিবর্তে এই মণ্ডলী শুধু নিজের রাজ্য বিস্তারে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই আমি দান দেই না।
৩) মণ্ডলীতে কর্মরত যারা আছেন তারা অভিযোগ করেন, আমরা সাধারণ সদস্যরা দান দিচ্ছি না, আর আমরা বাইরে থেকে দেখি, ওরা শুধু নিজে টিকে থাকার জন্য কাজ করছে, বর্তমান প্রজন্ম ওদের দ্বারা উপকার পাচ্ছে না। ওরা এমন সেবা দিচ্ছে যে বর্তমান প্রজন্ম বাইবেলের ঈশ্বরকে বিশ্বাস না করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। ওরা প্রজন্মকে সেকুলার মানসিকতার দিকে নিয়ে আরও হতাশায় ফেলছে। এমন সেবা পেলে দান দিচ্ছে ইচ্ছে করে না।
৪) যিনি মণ্ডলীর পরিচালনায় আছেন, তাঁকে আমি বিশ্বাস করি না। সে শুধু মণ্ডলীর কথা বলে কিন্তু ওর আচরণ ও কথায় ঈশ্বরভক্তি নাই, মানুষের প্রতি ভালোবাসা নাই। মণ্ডলী এমন মানুষদের রাখছেন যে এই মণ্ডলীতে দান দিলে মনে হয় আমার টাকা ভুল স্থানে জমা দিচ্ছি। তাই দেই না।
৫) মণ্ডলীর হিসাব নিকাশে গোলমাল পেয়েছিলাম, আমি একবার পরিষ্কার বুঝতে পেরেছি যে আমাদের পালক হিসাব নিকাশ লুকাচ্ছে। যতই প্রার্থনাশীল মানুষ হন না কেন, এরকম অস্বচ্ছ পালকের মণ্ডলীতে আমি দান দিতে ইচ্ছুক নই।
৬) আমরা মণ্ডলীতে শুধু ঈশ্বরের বাক্য শুনি কিন্তু বাস্তবে ঈশ্বরের হাত দেখতে পাই না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় যে এই মণ্ডলী এখন সেবা প্রতিষ্ঠান না হয়ে কোচিং এর মত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই দান করার ইচ্ছাও জাগে না।
ইত্যাদি বিভিন্ন মন্তব্য লোকদের মাঝে পাওয়া যায়।
** শুধু যে নেতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যায় এমন নয়। ইতিবাচক মন্তব্যও রয়েছে। যেমনঃ দেশে সংগঠিত হয়ে থাকার জন্য মণ্ডলী একটা মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে, মণ্ডলীর মধ্য দিয়ে আমরা একটা পরিচয় পাই, মণ্ডলীর মধ্য দিয়ে অনেক অসহায় শিশু পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে ইত্যাদি। তবে দান না দেয়ার পেছনে নেতিবাচক মন্তব্য বেশি আর সেগুলোই আমি তুলে ধরেছি।
কিছু মানুষ মন্তব্য করেন, ঈশ্বর দান দিতে বলেছেন তাই দান দিতে হবে, এই দান দিয়ে কি করা হচ্ছে এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়, এটা ঈশ্বর দেখবেন। যারা দাতা, তারা দানশীল হৃদয় থেকে এই কথা বলেন, যারা গ্রহীতা তারা গ্রহীতা মনোভাব থেকে এটা বলেন। দান নিয়ে কি করা হচ্ছে তা আসলেই কিছু ক্ষেত্রে দেখার প্রয়োজন নেই, তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখার প্রয়োজন হয়।
অনেক মণ্ডলীর কর্মরত ব্যাক্তি এই দানশীলতাকে কৌশল হিসাবে ব্যাবহার করেন। ওনারা বলে থাকেন, যদি হাজার টাকা দাও তাহলে তোমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করব। ঈশ্বর বলেন আপনি যা বপন করবেন তাই বেশি পরিমাণে তুলবেন, তাই বেশি বেশি দান করেন তাহলে ঈশ্বর আশির্বাদ করবেন। ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে আমরা একটা বিষয় ভুলে যাই, তা হলো- হিতোপদেশ বলে ধন দ্বারা ঈশ্বরকে সম্মান কর। তাই ধন সম্পত্তি দান করার উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরকে সম্মান করা, অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি কখনও দান করার প্রধান উদ্দেশ্য নয়। দান করার উদ্দেশ্য ধনী হওয়া নয়, ঈশ্বরকে প্রভাবিত করা নয়, সুস্থ হওয়া নয়। অনেকে এই পর্যন্ত পড়ে চিন্তা করতে পারেন, মালাখি পুস্তকেতো ভিন্ন বিষয় লেখা আছে। আমি সেই অংশেও যাব। তাই এখনই দয়া করে বিভিন্ন দিক চিন্তা না করে সাথে থাকেন।
হিতো ৩ঃ৯ এ ধন সম্পদ দ্বারা সদাপ্রভুকে সম্মান করার কথা লেখা আছে, আর সম্মান করলে আমরা কি পাব সেই বিষয়টি ১০ পদে উল্লেখ আছে। সম্মান করলে কি পাব?
হিতো ৩ঃ১০- তাহাতে তোমার গোলাঘর সকল বহু শস্যে পূর্ণ হইবে, তোমার কুণ্ডে নূতন দ্রাক্ষারস উথলিয়া পড়িবে।
অর্থাৎ বাক্য অনুসারে ঈশ্বরকে সম্মান করার পুরষ্কার আছে। বিশ্বাসী হিসাবে আমি যদি দান না করি তাহলে আমার ধন দিয়ে আমি ঈশ্বরকে সম্মান করছি না। আমি যদি নিজের ধন দিয়ে ঈশ্বরকে সম্মান না করি তাহলে আমি একজন প্র্যাক্টিক্যাল নাস্তিক। আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বর আছেন, কিন্তু এমনভাবে জীবন যাপন করি যে ঈশ্বর নেই। অনেকে শুধু দান দেন কিন্তু ঈশ্বরের পরিত্রাণের বার্তা প্রকাশে কোন গুরুত্বই দেন না, এই দানেও ঈশ্বর সম্মানিত হন না। কারণ এই দান তারা নিজে সুনামের জন্য, নিজেকে ভাল মানুষ হিসাবে প্রকাশ করার জন্য অথবা ভাল হৃদয় থেকে মানুষের উপকারের জন্য করছেন, কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে করছেন না। আমাদের উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ। নিজ স্বার্থে বা খারাপ উদ্দেশ্যে যদি ভাল কাজ করি, তাতে ঈশ্বরের সম্মান হয় না। নিজের, সমাজের বা দেশের সম্মান হতে পারে কিন্তু ঈশ্বরের নয়।
ঈশ্বরকেন্দ্রিক দানের মধ্য দিয়ে আমরা পাপের পরিত্রাণ পাই না বরং ঈশ্বরের সম্মান করি। দান দেয়ার জন্য অনেকে নিজের ফিলিংস বা আবেগের উপর নির্ভর করে। আরাধনা দিয়ে একটা উপমা দেইঃ
গীর্জায় অনেকে বলে যে এই গান না গাইলে ভাল কারণ এটা আমার পছন্দ না। কিন্তু আরাধনা আমার নিজের আবেগের বিষয় হওয়ার কথা নয়, আরাধনা আবেগের বিষয় নয়। আমরা নিজের আবেগকে আরাধনা করতে আসিনি। আমার ভাল লাগলে আরাধনা করব আর ভাল না লাগলে করব না, আরাধনা এরকম নয়। গান আমার পছন্দ কি পছন্দ নয় এটা আসল বিষয় নয়, ঈশ্বরের পছন্দ কিনা এটা হল আসল বিষয়। আমাদের নিজের জন্য জীবন যাপন করার কথা নয় বরং ঈশ্বরের জন্য জীবন যাপন করার কথা। যখন আমরা নিজের ভাল লাগাকে এবং নিজের আবেগকে বেশি প্রাধান্য দেই তখন নিজেকে আরাধনা করি, নিজের আবেগকে আরাধনা করি। দানের ক্ষেত্রেও আবেগ বা ফিলিংসকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ নয়। শুধু মুখ দিয়ে সম্মান করলে হবে না, নিজের ধন দিয়েও ঈশ্বরকে সম্মান জানাতে হবে। মুখ দিয়ে সম্মান জানানো সহজ, ধন দিয়ে সহজ নয় আর ঈশ্বর এটাই চান। ধন বলতে হিতোপদেশে সময়কে বুঝানো হয়নি, উপবাসকে বুঝানো হয়নি, অধিকার ত্যাগ বুঝানো হয়নি বরং সরাসরি অর্থনৈতিক ধনের বিষয় বুঝানো হয়েছে। হিতো ১০ পদেও পুরস্কার হিসাবে অর্থনৈতিক ধন বা খাবার দ্বারা ভান্ডার পূর্ণ হওয়ার বিষয় বুঝানো হয়েছে। আমরা ঈশ্বরের ভালোবাসা অর্জনের জন্য দান করিনা, স্বর্গে যাওয়ার জন্য করিনা বরং ভালোবাসা থেকে করি। যদি আমরা দান না দেই তাহলে আমরা ঈশ্বরকে ঠকাই।
মালাখি ৩ঃ৮,৯- … তোমরা ত আমাকে ঠকাইয়া থাক। কিন্তু তোমরা বলিতেছ, কিসে তোমাকে ঠকাইয়াছি? দশমাংস ও উপহারে। তোমরা অভিশাপে শাপগ্রস্থ; হাঁ, তোমরা, এই সমস্ত জাতি, আমাকে ঠকাইতেছ।
আমরা দান না করে ঈশ্বরকে আশির্বাদ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছি। আমরা ঈশ্বরকে ঠকাচ্ছি, তিনি আমাদের আশির্বাদ দিতে চান কিন্তু আমরা ঠকিয়ে তাঁর দেয়ার সুযোগ নষ্ট করছি। এখানে লেখা আছে শুধু দশমাংশে ঠকাচ্ছে এমন নয় কিন্তু অন্যান্য উপহারেও ঠকাচ্ছে। কোন উপহার? একটা হতে পারে হিতো ৩ঃ৯ পদের দান এবং অগ্রিমাংস। বাস্তবতায় একটু দেখা যাক-
আপনি কি নিজের অগ্রিমাংস হিসাবে প্রথম সন্তানকে প্রভুর জন্য দিয়েছেন নাকি ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা হিসাবে চিন্তা করছেন? তাকে প্রভুর জন্য দিয়েছেন নাকি মেজো ও ছোট সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাবে বলে চিন্তায় রেখেছেন?
সন্তান হিসাবে আপনি যদি বড় সন্তান হন তাহলে আপনাকে নিজের মাবাবা কি প্রভুর জন্য শতভাগ দিয়েছেন নাকি পরিবার চালানোর ভার আপনার উপরে দিয়েছেন? আপনি যদি পরিবারের ছোট বা মেজো সন্তান হন, আপনার বড় ভাই/বোন কি ঈশ্বরের জন্য উৎসর্গীকৃত নাকি আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত?
আমি বলছি না যে মাবাবার দেখাশোনা করা, ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা করা উচিৎ নয়। দেখাশোনা করা ভাল এবং সম্ভব হলে এটা করা প্রয়োজন। তবে অগ্রিমাংস হিসাবে পরিবারের প্রথম সন্তান কি করবে, এই বিষয়ে আমাদের মানসিকতা কেমন?
ঈশ্বরের সাথে অগ্রিমাংসের বিষয় ঠিক করেন, দশমাংশের বিষয় ঠিক করেন। যদি মাবাবা হন তাহলে এমন মাবাবা হন যারা ঈশ্বরের ভাগ ঈশ্বরকে দিতে রাজি আছেন, যদি ছোট বা মাঝের সন্তান হন তাহলে এমন সন্তান হন, যেন আপনি পরিবারের বড় ভাই/বোনকে সাহায্য করতে পারেন কারণ সে ঈশ্বরের অগ্রিমাংশ। আর সাহায্যের শুরু হিসাবে আপনার বদভ্যাস ছাড়তে পারলে চমৎকার হয়, ধূমপান, মাদক বা অন্যান্য নেশা ছাড়ুন, পরিবারের বড় সন্তান বা আপনার বড় ভাই/বোনের মঙ্গল হবে। আপনি যদি বড় সন্তান হয়ে থাকেন তাহলে ঈশ্বরের অগ্রিমাংশ হিসাবে নিজেকে পবিত্র করুন, নেশা ছাড়ুন। আমরা অনেকসময় ঈশ্বরের প্রাপ্য ঠিকমত দেইনা, পরে বিশাল ক্ষতি হয়ে যায় এবং ঈশ্বরকে অভিযোগ জানাই।
আমরা ঈশ্বরকে তার অংশ দেই না আর প্রার্থনা করি, ঈশ্বর সব ঠিক করে দাও, ঈশ্বর সুস্থ কর। ঈশ্বরকে আমি তাঁর প্রাপ্য দেই না মানে আমি প্রকাশ করছি সেই সম্পত্তি ঈশ্বরের নয়, সেটা আমার। যেহেতু এটা আমার নিজের সম্পত্তি তাই এই বিষয়ে যদি কোন সমস্যা আসে তা ঠিক করার দায়িত্বও আমার, ঈশ্বরের নয়। ঈশ্বরের দায়িত্ব না হলেও তিনি অনেক সময় দয়া দেখান এবং আমাদের সমস্যা সমাধান করে দেন। অগ্রিমাংশ হিসাবে সন্তানকে আমরা ঈশ্বরের জন্য পুরোপুরি দেই না, এর ফলে যদি পরিবারে সমস্যা হয় তা সমাধানের দায়িত্ব আমার। ঈশ্বরকে নিজের ধন দেই না, এই কারণে ধনে যদি সমস্যা আসে সেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমার। ঈশ্বরকে নিজের শরীর দেই না, এর ফলে যদি শরীরে সমস্যা হয় তা ঠিক করার দায়িত্ব আমার, ঈশ্বরের নয়। সমাধানের জন্য প্রার্থনা করতে পারি, ঈশ্বর যদি সমাধান করেন এটা তার দয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
আমরা যে ঈশ্বরকে দেই না তার কিছু উদাহরণঃ
১) চাকরি আমার নিজের, তাই ঘুষ খেলেও সমস্যা নেই। (ঈশ্বরকে সত্যিই চাকরির মালিক মনে করলে সে ঘুষ খাবে না।)
২) টাকা আমার নিজের, তাই নিজের ইচ্ছামত ধূমপান করলেও সমস্যা নেই। (ঈশ্বরকে সত্যিই টাকার মালিক মনে করলে সে এই টাকা দিয়ে নেশা করবে না।)
৩) শরীর আমার নিজের, তাই নিজের ইচ্ছামত ব্যাবহার করব। (ঈশ্বরকে সত্যিই নিজ শরীরের মালিক মনে করলে সে সনিয়ন্ত্রিত থাকবে।)
৪) এই প্রতিষ্ঠান আমার নিজের, তাই আমি আমার ইচ্ছামত এটা পরিচালনা করব। (ঈশ্বরকে সত্যিই নিজ প্রতিষ্ঠানের মালিক মনে করলে সে ঈশ্বরের নীতিমালা অনুসারে প্রতিষ্ঠান চালাবে, ইত্যাদি।)
আপনার সঞ্চিত ধন সম্পত্তি যদি ঈশ্বরের মনে করেন তাহলে শুধু ধন বৃদ্ধিতে এবং ধন টিকিয়ে রাখার দিকে মনোযোগ না দিয়ে ধন দিয়ে ঈশ্বরের সম্মান করুন। শুধু বেতন বৃদ্ধি এবং পরিবারের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা না করে পরিবার ও বেতন দ্বারা ঈশ্বরের সম্মান করুন। দশ টাকা দিয়েও সম্মান করুন, কোটি টাকা দিয়েও সম্মান করুন। যদি ঈশ্বরকে সম্মান করতে থাকেন, তাহলে তিনিই আপনাকে পরিচালনা করবেন। নিজের মত পরিচালনা করে বলবেন না যে ঈশ্বর পরিচালনা করছেন।
এখন একটা প্রশ্ন হল-
দশমাংশের বিষয়টা কি নতুন নিয়মেও প্রযোজ্য?
২ করি ৯ঃ৭- প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সংকল্প করিয়াছে, তদনুসারে দান করুক, মনোদুঃখপূর্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালবাসেন।
নতুন নিয়মের মথি ৬ঃ২-৪, ১ যোহন ৩ঃ১৬-১৮, প্রেরিত ২০ঃ৩৫, ইব্রীয় ১৩ঃ১৬, লূক ২১ঃ১-৪, ১ তিমথী ৬ঃ১৭-১৯ ইত্যাদি বিভিন্ন পদে দানশীলতায় গুরুত্ব দেয়ার বিষয় আছে।
বাইবেলে নতুন নিয়মের মণ্ডলীতে দশমাংশের বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। তাহলে কি দশমাংশ আর দিব না?
যীশু খ্রিস্ট শুধু আংশিক চান না, তিনি সব চান, তিনি একশত ভাগ দেয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করেছেনঃ
লূক ২১ঃ১-৪- গরীব বিধবা সব দিয়েছে, আর যীশু তার প্রশংসা করেছেন।
মথি ১৯ঃ২১- যীশু একজন ধনীকে সব বিক্রি করতে বলেন।
লূক ১৪ঃ৩৩- যীশু নিজের সবকিছু ত্যাগ করার বিষয় বলেছেন।
নতুন নিয়মে শিষ্যদের দশমাংশের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি কিন্তু সবকিছু ত্যাগ করার বিষয় বলা হয়েছে। তিনি একশ ভাগ চান। এর মানে মনে করবেন না যে আমি বলছি, সবকিছু বিক্রি করে ফতুর হয়ে যান। সব কিছু ত্যাগ করা মানে ফতুর হওয়া নয়, এখানে মূল বিষয় হল আপনার যা কিছু আছে, আপনি কি ঈশ্বরের বলে মনে করেন নাকি নিজের মনে করেন। যদি ঈশ্বরের মনে করেন তাহলেই শুধু ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য দিতে ইচ্ছুক হবেন। যখন ঈশ্বর আপনাকে সব বিক্রি করে দিতে বলবেন আপনি সব বিক্রি করতে রাজি থাকবেন। আর নিজের মনে করলে নিজের সুনাম ও প্রভাব বাড়ানোর জন্য অন্যকে, মণ্ডলীকে এবং সমাজকে দিতে ইচ্ছুক হবেন।
তাই আমার ব্যক্তিগত চিন্তা হল, দশমাংশ হল সর্বনিম্ন পরিমাণ যা দিয়ে আমরা দানশীলতা অনুশীলন শুরু করতে পারি। এরপরে এটা আরও বাড়ানো যায়। আপনি যদি দশমাংশ না দেন তাহলে দশমাংশ না দিয়ে ঈশ্বরকে ঠকাচ্ছেন, যদি হৃষ্টচিত্তে দান না দেন তাহলে হৃষ্টচিত্তে না দিয়ে ঈশ্বরকে ঠকাচ্ছেন। দয়া করে ভাল ফলাফল আশা করবেন না। আপনি হৃষ্টচিত্তে বেতনের তিন ভাগ দিচ্ছেন, দেন। পাঁচ ভাগ দিচ্ছেন, দেন। কিন্তু নিজেকে এমনভাবে সনিয়ন্ত্রণ করুন এবং ঈশ্বরের উপরে নির্ভরতা বাড়াতে থাকুন যেন দশ ভাগের বেশি দিতে পারেন।
** এখন আবার দান করার উদ্দেশ্যে চলে আসি। ঈশ্বর প্রকাশ করেন, যদি খুশিমনে দান দেই, যদি দশমাংশ দেই তাহলে ঘরে খাবার অভাব হবে না। অর্থাৎ বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, খাবার কেনার জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকবে, ব্যাংক ব্যাল্যান্স থাকবে বা অন্য কোন ব্যাবস্থা হবে। এই বিষয়টা আমরা বাইবেল থেকেই দেখি এবং মণ্ডলীর মানুষদের বিশ্বাসও করতে বলি। ঈশ্বরের বাক্য সত্য বলছে, ঘরে খাবার অভাব হবে না। তবে হিতোপদেশের এই বাক্যে দুই অংশে কাজকে ভাগ করা হয়েছে- আমাদের কাজ এবং ঈশ্বরের কাজ।
১) আমাদের উদ্দেশ্য ও কাজ হল নিজেদের ধন দ্বারা ঈশ্বরকে সম্মান দেয়া,
২) ঈশ্বরের কাজ হল আমাদের ভান্ডার পূর্ণ করা।
মালাখিতেও দুই অংশে কাজকে ভাগ করা হয়েছে।
১) মানুষের কাজ হল ঈশ্বরের মন্দিরে যেন খাবার অভাব না হয় সেই উদ্দেশ্যে দশমাংস দেয়া।
২) ঈশ্বরের কাজ হল মানুষকে আশির্বাদ করা।
আমরা অনেক সময় ভুল উদ্দেশ্যে দান করে থাকি। ঈশ্বর বুঝান আমরা যেন উদ্দেশ্য ঠিক রেখে দান করি, তাহলে তিনি ভাণ্ডার পূর্ণ রাখবেন। অথচ দান করার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য থাকে যেন আমাদের ভাণ্ডার পূর্ণ হয়, যেন আমাদের ব্যাংকে ব্যালেন্স বাড়ে, যেন আমাদের খাবার অভাব না হয়।
অর্থাৎ দান করার পেছনে ঈশ্বরকে সম্মান করা আমাদের উদ্দেশ্য থাকে না বরং উদ্দেশ্য থাকে নিজের সম্মান, নিজের নিরাপত্তা বা ব্যাংক ব্যাল্যান্স। এইভাবেই মণ্ডলীতে শিক্ষা দেয়া হয় আর পরে সমস্যা হলে মনে হয়, ঈশ্বর হয়তো আমাকে ভালবাসেন না। অথচ বাক্যে স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে যে নিজের ভান্ডার পূর্ণ করা আমাদের উদ্দেশ্য ও কাজ হওয়ার কথা নয়।
আমাদের কাজ হওয়ার কথা ধন দ্বারা ঈশ্বরের সম্মান করা এবং ঈশ্বরের মন্দিরের অভাব মেটানো। উদ্দেশ্য ভুল হওয়ার কারণে আমরা দান করার সময় চিন্তা করিনা, এতে কি ঈশ্বরের সম্মান হলো? বরং আমরা চিন্তা করি কেউ কি এখন আমাকে টাকা দিবে? ঈশ্বর কি আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেবে? আমার দুর্দশা কি দূর হবে? ইত্যাদি।
** অনেকে ঈশ্বরকে সম্মান করেন এবং ঠিকই যোগান পান। কিন্তু সেই যোগানের ভুল ব্যাবহারের ফলে অভাবে পরেন, পরে মনে হয় ঈশ্বর হয়তো রেগে আছেন, আরও প্রার্থনা করতে হবে। মানুষকে খুশি রাখতে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিত দান করেন, ঋণ হয় আর মনে করেন, ঈশ্বর কি আমাদের পরিবারকে দেখছেন না? ঈশ্বরের যোগান পাওয়া এক বিষয়, পরে এর সঠিক ব্যাবহার আরেক বিষয় যা নিয়ে পরে কোন সময় আলোচনা করা যাবে। আশা করি দান, দশমাংশ এবং দশমাংশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আগের চেয়ে পরিষ্কার হয়েছে।
দান ও দশমাংশের বিষয়টা সারাংশ আকারে যদি বলি-
১) ধন ব্যাবহারের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের সম্মান করা, তাহলে ঈশ্বর ভাণ্ডার পূর্ণ করেন।
২) দশমাংস দানের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের মন্দিরের খাবার অভাব দূর করা। আমাদের উদ্দেশ্য ও কাজ ঠিক থাকলে ঈশ্বর আশির্বাদ করবেন।
৩) আমরা ঈশ্বরের আশির্বাদ থেকে বঞ্চিত হই কারণ ক) আমরা দশমাংস ও দান দেই না, খ) ভুল উদ্দেশ্যে দান দেই।
৪) নতুন নিয়মের মণ্ডলীতে দশমাংস দানের কথা উল্লেখ নেই বরং হৃষ্টচিত্তে দান করার কথা উল্লেখ আছে।
৫) ঈশ্বর শুধু দশমাংস নয় কিন্তু আমার সবকিছু চান। এর অর্থ না যে সবকিছু বিক্রি করে বিলিয়ে দেব, এর অর্থ হল আমি কি নিজের সবকিছুর মালিক হিসাবে ঈশ্বরকে রাখি কিনা। যদি রাখি, তাহলে তিনি সব বিক্রি করতে বললে তাই করব।
৬) আমরা সাধারণত ঈশ্বরের আশির্বাদ দেখিনা কারণ ঈশ্বরের সম্মানে ধন ব্যয় না করে নিজের সম্মান সুনাম এবং নিজের ভান্ডার পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে দান দেই।
৭) আমরা যারা ঠিকমত ঈশ্বরের সম্মানের উদ্দেশ্যে দান দশমাংশ দেই তারাও অভাবে পড়তে পারি, যদি সেই ধন ভুল উদ্দেশ্যে, ভুল কাজে অথবা ভুল ভাবে ব্যাবহার করি।
৮) ব্যাতিক্রম আছে। ব্যাতিক্রম বিষয় এখানে তুলে ধরা হয়নি।
দান দশমাংস কোথায় দেব?
এই বিষয় নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক প্রচলিত আছে। দান দেয়া দরকার, দশমাংস দেয়া দরকার এটা মানুষ স্বীকার করে। দশমাংসের চেয়ে বেশি দেয়া দরকার এটাও মানুষ স্বীকার করে। কিন্তু কোথায় দেব এটা নিয়ে অনেকসময় দ্বিমত দেখা যায়। দশমাংসের বাইরে অতিরিক্ত দান কোথায় দেয়া যাবে এটা নিয়ে দ্বিমত কারো নেই, মোটামুটি সবাই একমত যে দশমাংসের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ যে কোন স্থানে দেয়া যায়। কিন্তু দশমাংস কোথায় দেব এটা নিয়ে দ্বিমত দেখা যায়। অনেকে মনে করে-
১) শুধু ঈশ্বরের মন্দির বা প্রাতিষ্ঠানিক মণ্ডলীতেই দশমাংশ দিতে হবে। এর বাইরে দিলে তা পাপ হবে। ঈশ্বর অখুশি হবেন।
২) মণ্ডলীতেই দিতে হবে এমন নয়, আমি দশমাংশের টাকা অন্যান্য মিশনারী এবং দরিদ্র বিশ্বাসীদের সাহায্য করার জন্য দিতে পারি, কিন্তু অবিশ্বাসীদের দেয়া যাবে না। দশমাংশের বাইরে অতিরিক্ত টাকা আমি অবিশ্বাসীদের দিতে পারব।
৩) দশমাংশের টাকা আমি নিজের ইচ্ছামত অবিশ্বাসী, বিশ্বাসী, মণ্ডলী যেকোনোখানে দিতে পারব।
ইত্যাদি মত প্রচলিত আছে। কিন্তু কোনটা আসলে সঠিক? আমরা ধাপে ধাপে প্রতিটা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করব।
১ম পয়েন্ট) দশমাংশ শুধু মণ্ডলীতে দিতে হবে। এর বাইরে দেয়া যাবে না।
কেন এটা সঠিক? কারণ মালাখি পুস্তকে উল্লিখিত আছে যে ঈশ্বরের মন্দিরে দিতে হবে।
এর উদ্দেশ্য কি? যেন ঈশ্বরের মন্দিরে খাওয়ার অভাব না হয়। (আমার বিশ্বাস এর মধ্যে পুরোহিতদের খাবার অন্তর্ভুক্ত।)
মন্দিরে যারা কাজ করছেন ওদের দায়িত্ব কি?
মালাখি পুস্তক পুরাতন নিয়মের একটি পুস্তক। তখন ঈশ্বরের মন্দিরের পুরোহিতেরা কি কি কাজ করত?
ক) পশু উৎসর্গ।
খ) ইস্রায়েল জাতির লোকদের বাস্তব সমস্যার বিচার।
গ) মেডিক্যাল/চিকিৎসা/আরোগ্য দান।
ঘ) পরামর্শ দান(কাউন্সেলিং)।
ঙ) ঈশ্বরের কাছ থেকে উত্তর জেনে মানুষদের জানানো(মধ্যস্থ হওয়া)।
চ) বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠান বা পর্ব পরিচালনা।
ছ) ধর্মীয় ও বাস্তব শিক্ষা দান।
ইত্যাদি। (লেবীয়, গণনা ও দ্বিতীয় বিবরণ পুস্তকে আপনারা এগুলো খুঁজে পাবেন।)
যীশু খ্রিষ্ট আমাদের পাপ থেকে উদ্ধারের পরে পশু উৎসর্গের আর কোন দরকার নেই। কিন্তু অন্যগুলো কি দরকার নেই? পুরোহিতের অন্য কাজগুলো কি বাতিল হয়ে গেছে?
** নতুন নিয়মের মণ্ডলীতে বিভিন্ন নেতৃত্বে মানুষ ছিলেন কিন্তু পূর্বের মত পুরোহিত প্রথা ছিল না। বর্তমানে পূর্বের মত পুরোহিত প্রথা যদি রাখা হয় তাহলে দশমাংশ পদ্ধতি আবশ্যক করা প্রয়োজন, এক্ষেত্রে পুরোহিতদেরও আগের মত কাজ করা লাগবে। নিজের পছন্দমত দশমাংশ পদ্ধতি রাখব কিন্তু পুরোহিতের কাজগুলো বাদ দেব এটা উপযুক্ত হবে না। যদি পুরাতন নিয়মের মত দশমাংশ মণ্ডলীর ঘরে আনা হয় তাহলে মণ্ডলীতে যারা কর্মরত আছেন তাদেরকে পূর্বের পুরোহিতের মত কাজ করতে হবে। যীশু উৎসর্গের আইন পূর্ণ করেছেন তাই সেটা আর দরকার নেই, কিন্তু অন্যান্য বাস্তব সেবাগুলো যীশু করে যাননি, সেগুলো করা পুরোহিতদের দায়িত্ব।
পুরাতন নিয়মে লোকেরা মন্দিরে দশমাংশ দিত, এর উদ্দেশ্য ছিল যেন পুরোহিতেরা অভাবগ্রস্থ না হয় এবং জনগণের জন্য উপরের সেবাকাজগুলো করতে পারে। তাই এমনি এমনি ঈশ্বর দশমাংশের ব্যবস্থা করেছেন এমন নয়। মালাখি পুস্তকে দশমাংশ দেয়ার বিষয় লেখা আছে ৩য় অধ্যায়ে। ১ম অধ্যায়ে কি আছে জানেন? ১ম অধ্যায়ে ঈশ্বর পুরোহিতদের ধমক দিচ্ছেন।
মালাখি ১ঃ৬– পুরোহিতদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর বলছেন।
প্রথম অধ্যায়ে দেখা যায় যে
১) পুরোহিতেরা ঈশ্বরের নাম অবজ্ঞা করছে।
২) অশুচি খাদ্য ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করছে।
৩) অন্ধ পশু উৎসর্গ করছে।
৪) মালাখি ২:২- পুরোহিতেরা ঈশ্বরের দিকে মনোযোগ দেয় না।
৫) মালাখি ২ঃ৭-৮- পুরোহিতের মুখ জ্ঞান রক্ষা করার কথা, কিন্তু ওরা ভুল পথে চলছে এবং অনেককে ভুল পথে চালিত করেছে।
৬) মালাখি ২ঃ৯- পুরোহিতেরা পক্ষপাতিত্ব করছে।
ঈশ্বর এই পুরোহিতদের সংশোধিত হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। অর্থাৎ ঈশ্বর প্রথমেই মণ্ডলীর সাধারণ সদস্যদের দশমাংশ দিতে বলেননি। প্রথম অধ্যায়ে তিনি পুরোহিতদের বকা দেন, কারণ ওরা ওদের কাজ ঠিকমত করছে না। ওরা ঈশ্বরের আইনের অবাধ্য হচ্ছে, অন্যদের ভুলপথে পরিচালিত করছে, পক্ষপাতিত্ব করছে। পুরোহিতদের ন্যায্য বিচার করার কথা, জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার কথা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য কাজ করার কথা।
প্রথমে পুরোহিতদের ঠিক পথে আসার জন্য আদেশ দেয়ার পরে, তৃতীয় অধ্যায়ে সদাপ্রভু দশমাংশ আনার বিষয়ে কথা বলেন। তাই আমরা যারা প্রভুর পথে কাজ করি, আমরা যদি আগের পুরোহিতদের মত ধর্মীয় ও বাস্তব শিক্ষা দান, মেডিক্যাল চিকিৎসা, পরামর্শ দান, আইনি জটিলতা মেটানো, বিচার করা ইত্যাদি বিষয় ঠিকমত করতে থাকি, তাহলে মালাখি ৩য় অধ্যায়ের দশমাংশের বিষয়টা দাবী করা আমাদের মুখে মানায়। আর যদি মণ্ডলী থেকে সাধারণ সদস্য কোন সাহায্য না পায়, পুরোহিতের কারণে যদি যুবক যুবতীরা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস আরও হারিয়ে ফেলে, আরও হতাশায় পরে, আত্মিক দিকের চেয়ে জাগতিকতায় চলে যায়, আরও বেশি উচ্ছ্রিংখল হয়ে যায় তাহলে কিভাবে আমরা লোকদের কাছে দশমাংশ দাবী করব? (দশমাংশ দাবী করারও বিষয় নয়।)
** তাই যারা চিন্তা করেন যে শুধু মণ্ডলীতেই দশমাংশ দিতে হবে, তাদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা উপরের সেবাগুলো ঠিকমত দিন, সদস্যরা খুশি হয়ে আপনাদের আরও বেশি দান করবে। কারণ পরিচালক/পুরোহিত হিসাবে আপনি যদি সঠিক শিক্ষা দেন, ঈশ্বরের সাথে ওদের সম্পর্ক করতে সাহায্য করেন, যুবক যুবতীদের হতাশা দূর করতে সফল হন, উচ্ছ্রিংখলা না থাকে, দলাদলি না থাকে, পক্ষপাতিত্ব না থাকে তাহলে মণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে শান্তি আসবে এবং সমৃদ্ধি দেখা যাবে। লোকদের মধ্যে পবিত্র আত্মার দান স্পষ্ট হবে, আশ্চর্য কাজ দেখা যাবে, লোকেরা যীশুর কথা প্রচার করবে। আর তখন দান করার বিষয়ে এত বেশি বলতে হবে না। লোকেরাই বলবে মণ্ডলীর জন্য আমরা কি করতে পারি? আর যদি আমাদের মণ্ডলীর পুরোহিতদের অবস্থা মালাখি পুস্তকের পুরোহিতদের মত হয়ে থাকে। সংশোধিত না হয়, তাহলে মণ্ডলীতে দানের পরিমাণ বাড়বে না। আপনি জোর করে কিছুটা বাড়াতে পারবেন কিন্তু তিক্ততা তৈরি হবে যা ভবিষ্যতে মণ্ডলীর আরও ধ্বংস নিয়ে আসবে।
২য় পয়েন্ট) দশমাংস অন্যান্য অভাবী বিশ্বাসীদেরও দিতে পারি তবে অবিশ্বাসীকে নয়।
কেন এটা সঠিক? কারণ বিশ্বাসীরা এখন ঈশ্বরের মন্দির।
এর উদ্দেশ্য কি? ঈশ্বরের মন্দির বা বিশ্বাসীর যেন খাবার অভাব না হয়। (মালাখি পুস্তকের উদ্দেশ্য যুক্ত করে।)
ঈশ্বরের মন্দির বা গীর্জায় দশমাংস দিতে কোন বাঁধা নেই। সেখানে দেয়া যায়। তবে বাক্য অনুসারে বিশ্বাসীরাও যেহেতু ঈশ্বরের মন্দির তাই ওদেরও দেয়া যায়, বিশেষ করে যারা মিশন কাজে ফুল টাইম কাজ করেন ওদের আরও বেশি দেয়া যায়। এই অর্থ অবিশ্বাসীদের জন্য দেয়া যাবে না কারণ তারা এখনও ঈশ্বরের মন্দির হয়নি। বিশ্বাসী হওয়ার পরে ওদের দেয়া যাবে। তবে দশমাংশের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ অবিশ্বাসীদের দেয়া যাবে।
১ করি ৩:১৬- তোমরা কি জান না যে, তোমরা ঈশ্বরের মন্দির, এবং ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের অন্তরে বাস করে?
যেহেতু দশমাংশের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের মন্দিরে খাবার অভাব না রাখা, তাই জীবন্ত ঈশ্বরের মন্দির অর্থাৎ অভাবী বিশ্বাসীদেরও দশমাংসের টাকা দেয়া যায়। যে বিশ্বাসীর ঘরে খাবার অভাব আছে, যারা ঈশ্বরের জন্য কাজ করছে কিন্তু টাকার অভাবে কাজ করতে পারছে না, ওদেরকে দিলেও সমস্যা নেই। কারণ ওরাও ঈশ্বরের মন্দির। যারা বলেন শুধু গীর্জায় দশমাংশ দিতে হবে ওরাতো বাইবেল থেকে নিজের সুবিধার জন্য মালাখি পুস্তকের দশমাংসের পদ ব্যাবহার করেন, অন্য পদ নিয়ে আসেন না, কারণ অন্য পদ ব্যাবহার করলে লোকেরা হয়তো গীর্জায় না দিয়ে অন্যখানে দেবে, কারণ মণ্ডলীর সার্ভিস ওদের পছন্দ নয় । পুরোহিতেরা মালাখি ১ম ও ২য় অধ্যায়ে নিজেদের পরিবর্তনের পদ বাদ দিয়ে শুধু ৩য় অধ্যায়ের দশমাংশের বিষয় নিয়ে আসে। আংশিক পদ বাছাই তাদের পছন্দ নয়, যারা বিশ্বাস করে ঈশ্বরের মন্দির হিসাবে অন্য বিশ্বাসীদের দশমাংশের অর্থ দেয়া যায়। তবে যদি পুরাতন নিয়ম অনুসারে পুরোহিতেরা ঠিকমত নিজেদের কাজ করে থাকেন, এবং সেই মণ্ডলী থেকে অন্যান্য মিশনারিদের জন্য সাহায্য পাঠানো হয়, সেক্ষেত্রে এই লোকেরাও গীর্জাঘরে দশমাংশ আনার বিষয়টা সমর্থন করেন। কারণ এই দশমাংশ ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ব্যাবহার করা হচ্ছে, শুধু নিজের মণ্ডলীর লোকদের বেতন দেয়ার জন্য নয়।
যাকোব ২:১০ঃ কারণ যে কেহ সমস্ত ব্যবস্থা পালন করে, কেবল একটি বিষয়ে উছোট খায়, সে সকলেরই দায়ী হয়েছে।
যারা বিশ্বাস করে মণ্ডলীর বাইরে বিশ্বাসীদের দশমাংশ দেয়া যাবে তাদের অনেকের মত, যদি মালাখি ৩য় অধ্যায়ে দশমাংশের বিষয় মানতে হয় তাহলে অন্য সব মানতে হবে। এই একটি পদের মধ্যে আটকে থাকলে হবে না। পুরোহিতদের আগের কাজগুলো করতে হবে। কারণ দশমাংশের বিষয়ে যদি মানি কিন্তু অন্যগুলো না মানি, তাহলে যাকোব পুস্তক অনুসারে আমি সব আইন ভঙ্গ করার জন্য দায়ী। তাহলে যেখানে ইচ্ছা সেখানে দশমাংশ দিলাম, দলাদলি ও অকার্যকর কুসুম গরম মণ্ডলীতে নাই দিলাম।
৩য় পয়েন্ট) দশমাংশের টাকা বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী যে কাউকে নিজের ইচ্ছামত দেয়া যায়।
এই পয়েন্ট আসলে বাইবেল সমর্থন করে না। যদি দশমাংশ প্রথা কেউ মেনে থাকেন, তাহলে মানতে হয় যে অবিশ্বাসীরা ঈশ্বরের মন্দির নয়, অতএব ওদের জন্য এটা ব্যাবহার করা যাবে না। তবে যদি কেউ বিশ্বাস করে থাকেন যে দশমাংশের আইন নতুন নিয়মে আর প্রযোজ্য নয়, তাহলে তারা এই পয়েন্ট মানতে পারে। যদি আপনি ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ হন, হৃষ্টচিত্ত দাতা হয়ে থাকেন, এবং আপনার মণ্ডলী ভাল করে, আমার বিশ্বাস আপনি এমনিতেই মণ্ডলীতে দশমাংশের বেশি দান করবেন, এবং একই সাথে অবিশ্বাসীদেরও সাহায্য করবেন। এখানে কৃতজ্ঞতা এবং হৃষ্টচিত্ত দাতা হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহারঃ
এই দশমাংস আমাদের পাপের পরিত্রাণ দেয় না, এটা এমন একটা বিষয় যা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তাই কোনটা ভুল এবং ঠিক এই সিদ্ধান্ত আমি নেব না। আপনার যেটা উপযুক্ত মনে হয় আপনি সেটা করবেন। যদি তর্ক করতে ইচ্ছে করে তাহলে মনে রাখবেন, নতুন নিয়মে এসে ঈশ্বর শুধু দশমাংশ চান না বরং মানুষের মঙ্গলের জন্য আপনার একশত ভাগ চান।
আমি জানি যে, প্রাতিষ্ঠানিক মণ্ডলীর যেমন অর্থ প্রয়োজন, ব্যাক্তিগত মিশনারীদেরও অর্থের প্রয়োজন। আপনার মণ্ডলী যদি আসলেই যীশুর দেয়া কাজগুলো ঠিকমত করতে থাকে, সুসমাচার প্রচারকারীদের এবং যারা মিশন কাজে সরাসরি জড়িত আছেন এমন মানুষদের সাহায্য করে থাকে, মণ্ডলী যদি আপনার পরিবারে ঈশ্বরের আশির্বাদ নিয়ে আসতে থাকে, তাহলে সেই মণ্ডলীকে দান করা অবশ্যই উপযুক্ত।
এশিয়ার অধিকাংশ মণ্ডলীতে ঈশ্বরের রাজ্য বৃদ্ধির জন্য সরাসরি কার্যক্রম এবং সাধারণ সদস্যদের উন্নতির জন্য বাইবেলীয় কার্যক্রম দেখা যায় না। অনেক মণ্ডলী এখন বাইবেলীয় না হয়ে জাগতিক দিকে বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে। এরকম মণ্ডলীতে দান করতে ইচ্ছে করে না। যদি আপনার মণ্ডলী নিজের ভুল স্বীকার করে, সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার আকাংখা পোষণ করে এবং নিজেদের পরিবর্তনে বাইবেলে দেখানো পথে হাঁটা শুরু করে, তাহলে সেখানেও মণ্ডলীর লোকেরা দান করতে ইচ্ছুক হবে। ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা যে মণ্ডলী পরিচালিত হবে, সেই মণ্ডলীর লোকেরা কখনও আশির্বাদবিহীন থাকতে পারে না। লোকেরা যীশুতে বিশ্বাসী হলেও যদি সেই মণ্ডলী ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা পরিচালিত না হয়, বিশেষ করে পুরোহিতে/পরিচালকগণ পরিচালিত না হন, তাহলে সদস্যরা দান করতে বাঁধাপ্রাপ্ত হবে।
এক্ষেত্রে মণ্ডলীতে সাধারণত যে ভুলগুলো হয় তা হল–
১) বাইবেল জানে না এরকম মানুষকে মণ্ডলী পরিচালনায় ব্যাবহার করা।
২) বাইবেল জানে কিন্তু নিজের জীবনে প্রয়োগ করে না এমন মানুষকে ব্যাবহার করা।
৩) ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক করার চেয়ে মানুষের সাথে সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক এমন লোকদের ব্যাবহার করা।
৪) বাইবেল জ্ঞান আছে, চরিত্র ভাল কিন্তু ঈশ্বর থেকে ফুল টাইম মিনিস্ত্রির জন্য আহ্বানপ্রাপ্ত নয়, এমন লোকদের পরিচর্যায় ব্যাবহার করা। শুধু মানুষের জ্ঞানে তাদের অভিষেক করা হয় আর বলা হয় ঈশ্বর অভিষেক করেছেন।
৫) যাদের দ্বারা অন্য কোথাও কাজ হবে না ওদেরকে অনুগ্রহ করে পরিচর্যার কাজে লাগানো। যদিও ঈশ্বর সবচেয়ে ভাল, দক্ষ মানুষদের এই পথে উৎসর্গ করতে বলেছেন কিন্তু আমরা অদক্ষ মানুষদের নিয়ে আসি।
ইত্যাদি।
যদি অর্থ এবং আশির্বাদ পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের পরিচর্যা কাজ করেন, তাহলে স্বীকার করা দরকার যে আমার চিন্তা ভুল, আমার পরিবর্তিত হতে হবে। অনুতপ্ত হয়ে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চান, যাদের সাথে ঈশ্বরের সম্পর্ক আছে এবং পরিপক্বভাবে পরামর্শ দিতে পারে ওদের পরামর্শ অনুসারে চলুন, ঈশ্বর পরিবর্তন নিয়ে আসবেন এবং লোকেরা হৃষ্টচিত্তে দান দেবে, জোর করতে হবে না। ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া নিজের চেষ্টায় করুন, সাময়িক ফল দেখতে পাবেন, কিন্তু এটা টিকবে না, আর আপনি অহংকারী হয়ে যাবেন।
দশমাংশ ও দান নিয়ে আরও অনেক কিছু বলা যায়। দান দশমাংশ যদি ঠিকভাবে ব্যাবহার করা হয় তা কিভাবে আমাদের ব্যাক্তিগত অর্থনৈতিক ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করে তা নিয়ে পরে লেখার ইচ্ছা রইল।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অগ্রিমাংশের ক্ষেত্রে বড় সন্তানের উদাহরণ দেয়া হয়েছে যা নিয়ে ভুল চিন্তা চলে আসতে পারে। মাবাবা অগ্রিমাংস হিসাবে বড় সন্তানকে উৎসর্গ করছেন মানে এই নয় যে সে সম্পূর্ণ সময়ের জন্য পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করবে। অগ্রিমাংস হিসাবে দিচ্ছি মানে আমি তাকে আর নিজের ইচ্ছামত পরিচালনা করব না। ঈশ্বর যেদিকে চান, তাকে সেইদিকে পরিচালিত হতে সাহায্য করব। ঈশ্বর তাকে সম্পূর্ণ সময়ের জন্য পরিচর্যাতে ডাকতে পারেন আবার অন্য কোন কাজেও ডাকতে পারেন, মাবাবা হিসাবে আমরা যদি ঈশ্বরের সাথে তার সরাসরি যোগাযোগের ব্যাবস্থা করে দিতে পারি এবং গাইড করতে পারি তাহলে সেই সন্তান নিজেই ঈশ্বর দ্বারা পরিচালিত হতে পারবে।
ধন্যবাদ।
যদি উপযুক্ত মনে করেন, এই লেখাটি বিভিন্ন মণ্ডলীর নেতা/পরিচালক/পালক/সম্পাদক গণের কাছে পাঠিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি চাই এশিয়ার সকল মণ্ডলী যেন প্রভু যীশুতে শক্তিশালী হয়।